১০ টি নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত

কেন নিম পাতার রস খাবেন আপনার এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত ৷ আমরা অনেকেই নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাবার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জানিনা ৷ যারা নিম পাতার রস খাওয়ার সঠিক নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে জানেন না সাধারণত তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ৷

আমরা জানি নিম একটি ঔষধি বৃক্ষ ৷ নিম পাতার রস আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী তা কম বেশি আমরা সকলেই জানি ৷ কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা নিম পাতার রস কিভাবে খেতে হয় ও শরীরের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে ৷ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে নিমপাতার রস যেভাবে খাবেন বিস্তারিত জেনে নিন ৷

পেজ সূচিপত্রঃ নিচের যে অংশ থেকে পড়তে চান, ক্লিক করুন

ভূমিকাঃ নিম কি?

নিম হচ্ছে একটি ওষুধি বৃক্ষ যার ডাল, পাতা, রস সবই মানুষের দৈনন্দিন জীবনে অনেক কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে ৷ একটি নিম গাছ সঠিকভাবে পরিপক্ক হয়ে উঠলে এর গুড়ি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র তৈরি করা হয় ৷

নিম পাতা কোথায় পাওয়া যায়?

নিম গাছের আদি নিবাস মিয়ানমার হয়ে থাকলেও বর্তমানে বাংলাদেশ সহ ভারত, পাকিস্তান, ও সৌদি আরবে নিম গাছ পাওয়া যাই ৷ ভারত এবং বাংলাদেশের সর্বত্রই নিম গাছ জন্মে থাকে ৷ একটি নিমগাছ প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে উঠতে কমপক্ষে ১০ বছরের মত সময় নেয় ৷ সাধারণত উষ্ণ আবহাওয়া প্রধান অঞ্চলে নিম গাছ ভালো হয়ে থাকে ৷ যেমন বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে এই বৃক্ষের সন্ধান মেলে ৷

নিম পাতার উপকারিতাও অপকারিতা

প্রায় ৫০০০ বছরেরও অধিক সময় ধরে বিভিন্ন রোগ ও উপসর্গের সঙ্গে লড়াই করে নিম পাতা আজও এক নম্বরে ৷ আপনি কি জানেন নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা কি? নিয়মিত নিমের পাতা সেবন করলে এটি আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে ৷ নিয়মিত নিমের পাতা খেলে আপনার শরীরের ক্লান্তি ভাব দূর হয় এবং কাশি কমাতে সহায়তা করে ৷ এছাড়া আপনার শরীরের ক্ষত দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে, মূত্রনালী সংক্রমণ কমায় ও কৃমির সমস্যা দূর করে ৷ তাহলে চলুন নিচে আরো কিছু নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক । 

নিমের রসের উপকারিতা

নিয়মিত নিম পাতার রস মাথায় লাগালে আপনার চুলকানির সমস্যা কমে যায় ৷ চুলের খুশকির সমস্যা দ্রুত দূর করতে শ্যাম্পু করার পরে নিম পাতার রস করা গরম জল দিয়ে চুল সুন্দর করে ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন এতে আপনার খুশকির সমস্যা দ্রুত দূর হবে ৷ নিয়মিত চুলে নিম পাতার ব্যবহারে আপনার চুল হবে উজ্জ্বল, সুন্দর, ও দৃষ্টি নন্দন ৷

এছাড়া নিয়মিত নিম পাতার রস সেবন আপনার চুল পড়া কমাতে সহায়তা করে ৷ যদি আপনি নিয়মিত নিম পাতার সঙ্গে কাঁচা হলুদ পেস্ট করে লাগান তাহলে সেটি আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ৷

খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয়?

ওপরে আমরা নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করেছি । চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক যে খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয় বা আমাদের শরীরে কি ধরনের প্রভাব পড়ে । নিমপাতায় উপস্থিত গুনাগুন অ্যাসিডিটিতে খুবই কার্যকরী ৷ প্রতিদিন যদি নিমপাতা জলে সিদ্ধ করে খালি পেটে এর রস পান করা যায় তাহলে এতে অ্যাসিডিটি ও পেটের ব্যথা নিরাময় হয় ৷ এছাড়াও নিমের পাতায় বিদ্যমান রয়েছে ভিটামিন, মিনারেল, ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট,অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ভাইরাল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়াতে সাহায্য করে ৷

প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ১০ থেকে ১৫ টি নিমের পাতার রস করে খাওয়া যেতে পারে ৷ এছাড়াও নিমের পাতার রস লেবু ও মধুর সঙ্গে মিশিয়ে পান করা যেতে পারে ৷ খালি পেটে নিমপাতার রস সেবনে পেট পরিষ্কার থাকে ৷ নিম পাতার রস সেবন লিভারের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে ৷
এছাড়া যারা ব্লাড সুগার বা ডায়াবেটিসের রোগী রয়েছে তারা যদি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ৫টি গোলমরিচ ও ১০টি নিম পাতা বেটে খাই তাহলে তা ব্লাড সুগার বা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে ৷ আর ডায়াবেটিস যদি নিয়ন্ত্রণে থাকে তাহলে সব রোগ নিয়ন্ত্রণে আসে ৷ আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের মতে, নিমের রস যদি চিনি বা চিনির মিছরির সঙ্গে খাওয়া যায় তাহলে কাশি থেকে মুক্তি মেলে ৷

নিম পাতা দিয়ে গোসল করার উপকারিতা

আপনার যদি চুলকানি বা এলার্জিজনিত সমস্যা থেকে থাকে তাহলে নিম পাতা গরম জলে ফুটিয়ে সেই জলকে ঠান্ডা করে নিয়ে গোসল করলে আরাম পাওয়া যায় ৷ নিমের পাতায় থাকা অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল উপাদান আপনাকে যে কোন সংক্রামক ব্যাধি ও ত্বকের সমস্যা থেকে দূরে রাখবে ৷

গরমে নিম পানিতে গোসলের উপকারিতা

তীব্র গরমে সারা শরীর যেন জ্বলে যাওয়ার মত অবস্থা ৷ এই তীব্র গরমে কি করলে শরীরে মিলবে একটু আরাম তার পথ অনেকেই খুঁজছেন ৷ এই তীব্র গরমে পানিতে নিম পাতা মিশিয়ে গোসল করতে পারেন ৷ তীব্র গরমে নিম পানিতে গোসলের উপকারিতা অপরিসীম ৷ এতে পাবেন নানা উপকার ৷ যেমন ,

ঘামের গন্ধঃ 

তীব্র গরমে শরীর ঘেমে একাকার হয়ে যায় ৷ চপচপে ঘামে ভেজা শরীর থেকে আসে প্রচন্ড দুর্গন্ধ যা যেতে চায় না সহজে ৷ বাড়ির বাইরে বেরোনোর আগে নিমপাতার পানিতে গোসল করতে পারেন ৷ এতে আপনার শরীরের দুর্গন্ধ দূর হবে ৷

অ্যালার্জিঃ 

গরমের দিনে অ্যালার্জির সমস্যাও বেড়ে যায় ৷ শরীরের চুলকানি থেকে রেহাই পেতে গোসল করতে পারেন নিমপাতা দিয়ে ফোটানো গরম পানিতে ৷ নিমে থাকা এন্ট্রি মাইক্রোবিয়াল উপাদান আপনার শরীরকে সংক্রামক ব্যাধি ও চুলকানি জনিত সমস্যা থেকে দূরে রাখবে ৷ আপনি যদি এই ধরনের সমস্যায় ভোগেন তাহলে নিমের পাতা দিয়ে ফোটানো গরম পানি ঠান্ডা করে গোসলের পানির সঙ্গে মিশিয়ে গোসল করতে পারেন ৷ এতে অনেকটা উপকার মিলবে ৷

দাগ ছোপঃ 

গরমের দিনে ত্বক হয়ে যায় রুক্ষ ও শুষ্ক ৷ ত্বক রোদে পুড়ে কালো হয়ে যায় ৷ মুখে দেখা দেয় মেছতা সহ নানা ধরনের দাগ ৷ প্রেমের পাতা যে কোন ধরনের দাগ দূর করতে বেশ কার্যকরী ৷ এছাড়া আপনার যদি ব্ল্যাকহেডসের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে নিমপাতা দিয়ে ফোটানো পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন ৷ এতে অনেকটা উপকার পাবেন ৷ এছাড়া নিমের পাতা ব্রণের দাগেও বেশ কার্যকর ৷ মুখে ব্রণের দাগ থাকলে নিম পাতা বেটে লাগালে ব্রণের দাগ দ্রুত ভালো হয়ে যায় ৷

খুশকিঃ 

খুশকির সমস্যা দূর করতে নিম পাতা অতুলনীয় ৷ আপনার যদি খুশির সমস্যা থেকে থাকে তাহলে তা নিমিষেই দূর করবে নিম ৷ খুশকির সমস্যা থাকলে নিমপাতা বেটে তার রস মাথায় লাগাতে পারেন ৷ এছাড়া চুলের গোড়ায় ধুলোবালি জমলে তা দূর করতে নিমপাতা বেশ কার্যকর ৷ সে ক্ষেত্রে আপনি যদি নিমপাতার পানি দিয়ে গোসল করেন তাহলে উপকার পাবেন ৷

নিমপাতা দিয়ে কীভাবে গোসল করবেন

তাজা নিম পাতা নিন ৷ এরপর তিন থেকে চার মিনিট নিম পাতা গুলিকে গরম পানিতে ফুটতে দিন ৷ পানির রং যখন হলদেটে হয়ে আসবে এবং পানি থেকে নিম পাতার গন্ধ বের হবে তখন নিম পাতা গুলো পানি থেকে ছেকে তুলে নিন ৷ নিম পাতায় ফোটানো পানি ঠান্ডা হলে তা গোসলের পানির সঙ্গে মেশান ৷ এছাড়া নিমপাতা বেটে তার রস পানির সঙ্গে মিশিয়েও গোসল করতে পারেন ৷

চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার

চর্মরোগ এক ধরনের মারাত্মক ব্যাধি ৷ বর্ষার সময় এই রোগের উপদ্রব বেশি দেখা যায় ৷ বর্ষার আদ্রতার কারণে এই রোগ অতি দ্রুত ছড়ায় বা সহজেই হতে পারে ৷ এ ধরনের রোগের সংক্রমন কমাতে চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার করতে পারেন ৷ ত্বকের সংক্রামক রোগের সর্বোত্তম চিকিৎসা হলো নিম পাতার পেস্ট করে লাগানো ৷ ১০ থেকে ১৫ টি নিম পাতা নিন এবং এর একটি পেস্ট তৈরি করুন ৷ এরপর এটি আপনার ত্বকের সংক্রামক স্থানে, চুলকানি বা দাদ রয়েছে এমন স্থানে ভালো করে লাগান ৷ ২ থেকে ৩ দিন এই পেস্ট লাগালে ভালো উপকার পাবেন ৷

তৈলাক্ত ত্বকে নিম পাতার ব্যবহার

নিমপাতা তৈলাক্ত ত্বকের জন্য বেশ কার্যকরী একটি উপাদান ৷ মুখের তৈলাক্ততা দূর করার জন্য নিম পাতার পেস্ট ব্যবহার করতে পারেন এতে ভালো ফলাফল দেবে ৷ নিমে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য যা তৈলাক্ত ত্বকের কারণে বিদ্যমান ব্রণের দাগ দূর করতেও সাহায্য করে ৷
এছাড়া নিম পাতার পেস্ট মুখের ব্রণের দাগ, মেস্তার দাগ ও রোদে পোড়া কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে ৷ এছাড়া নিমের তেল আপনার ত্বকের জন্য বেশ উপকারী ৷ তাই তৈলাক্ত ত্বকে নিম পাতার ব্যবহার অনেক ফলদায়ক ৷ বিশেষ করে তৈলাক্ত তোকে নিম পাতার ব্যবহারে মুখের ব্রণ, মেস্তার দাগ দ্রুত নিরাময় হবে এবং আপনার ত্বকে উজ্জ্বল ও চকচকে জেল্লা দেবে ৷

উপকারী নিমপাতা হতে পারে ক্ষতির কারণ!

নিম পাতা যেমন উপকারী তেমনি হতে পারে ক্ষতির কারণ ৷ আমরা জানি নিম একটি ঔষধি গুণসম্পন্ন বৃক্ষ ৷ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর ব্যবহার হয়ে থাকে ৷ চর্মরোগে এর গুরুত্ব অনেক বেশি ৷ কিন্তু আপনার ত্বকে যদি বেশি অ্যালার্জি জনিত সমস্যা হয়ে থাকে এবং অস্বাভাবিক ধরনের চর্ম জাতীয় রোগ দেখা দেয় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ত্বকে নিম পাতার ব্যবহার করা উচিত নয় ৷ সেক্ষেত্রে উপকারী নিম পাতা হতে পারে ক্ষতির কারণ ৷
এতে উপকার এর চাইতে ক্ষতির আশঙ্কায় বেশি ৷ এছাড়া গর্ভবতী মহিলাদের নিম পাতার সেবন বা নিম পাতার ব্যবহার করা উচিত নয় এতে অনেক ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে ৷ তাই নিম পাতার ব্যবহার এবং সেবনে থাকতে হবে সচেতন ৷

আমাদের শেষ কথা

আপনার শরীরের বিভিন্ন সমস্যায় ঔষধি গুন সম্পন্ন নিম পাতা কিভাবে সেবন করবেন ও এর ব্যবহার এবং নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে উপরে বিস্তারিত আলোচনা করেছি ৷ আপনি যদি নিম পাতা খেয়ে উপকারিতা পেতে চান তাহলে উপরি উক্ত নিয়ম মেনে নিম পাতা সেবন করতে পারেন ৷ নিম পাতার রয়েছে আরো অনেক উপকার যদি সেগুলো পেতে চান তাহলে নিয়ম মেনে আপনাকে নিম পাতা সেবন করতে হবে ৷

তবে নিমপাতা খাওয়ার পূর্বে আপনাকে নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে হবে ৷ এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এই ধরনের তথ্যমূলক আর্টিকেল নিয়মিত পড়তে হলে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে থাকুন। কারণ আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত এই ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url